শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে তো ছুটছেই। এর মুখে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পদতলে জনজীবন পিষ্ট হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে দৈনন্দিন পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পরিবার প্রধানদের উঠছে নাভিশ্বাস। ’
খুলনা মহানগরীর সিমেন্ট্রি রোডের বাসিন্দা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী এসব কথা বলেন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা পড়েছি বিপাকে, যারা কারো কাছে যেতে পারে না বলতে পারে না, না পারে বাসা-বাড়িতে কাজ করতে, তাছাড়া রয়েছে করোনার ভয়। অনেক পরিবারে বাবা-মা ও ছেলেমেয়েসহ কমপক্ষে ৬/৭টি পেট,তাহলে সারাদিনে দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২১টি প্লেট, যেখানে ৪০ টাকার নিচে চাল নাই যে চাল অনেকেই খেতে পারে না। আর কাঁচাবাজার!! যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ’
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে হবে ভালো ভালো খেতে হবে। কিন্তু দ্রব্যের যা মূল্য তাতে বেঁচে থাকার জন্য খাবার যোগার করায় দায় হয়ে পড়েছে।
সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের উঠেছে নাভিশ্বাস। পেঁয়াজ-সবজির বাইরে বাজারে এখন চালের দামও প্রতিদিন বাড়ছে। আলুর কেজি ৫০ টাকা। সঙ্গে ভোজ্যতেল, ডিম, আদা, রসুন ও সবজি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ দাম মানুষকে ভোগাচ্ছে। বাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে সবজি নেই বললেই চলে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের কর্মচারী মামুন বলেন, মধ্যবিত্ত জীবনের কি যে কষ্ট তা শুধু মধ্যবিত্তরাই জানে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের মতো স্বল্প বেতনের মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে কষ্টে আছে। আমাদের বড় সম্পদ আত্মসম্মান। না পারি কারও কাছে হাত পাততে। না পারি কষ্টের কথা বলতে। বুকে কষ্ট নিয়ে হলেও সমাজের সব শ্রেণীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয় আমাদের।
শান্তিধাম মোড় এলাকার রিকশাচালক আব্দুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড রোদে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারি না। ক্লান্ত হয়ে যাই। অভাব আর দারিদ্র্যের কশাঘাতে আর পারছি না। জীবন চালানোর প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আজ এক দামে কোনো একটি পণ্য কিনে নিয়ে গেলে পরদিন দেখা যায় সেই পণ্যের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে কয়েক টাকা। অনেকে রিকশা চালানো বাদ দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারণ ঘর ভাড়া দিয়ে ঠিকমতো বাজার করে খেয়ে শহরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে খোদ ব্যবসায়ীরাও তোপের মুখে পড়ছেন ক্রেতাদের এমনটি জানালেন বড় বাজারের মুরাদ ট্রেডার্সের ম্যানেজার জিয়াউল হক মিলন।
তিনি বলেন, সব জিনিসের দামই বেড়েছে। ক্রেতারা এসে দাম বেশি শুনে তর্ক শুরু করেন। মোটা আতপ চাল যা গতমাসে পাইকারীতে কেজি ২৭ টাকা ছিলো তা এখন ৩৯ টাকা। স্বর্ণা ৩৪ থেকে বেড়ে ৪৪ টাকায়। বালাম ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়। খোলা সোয়াবিন তেল ৮৭ থেকে এখন ৯৭ টাকায়, পাম অয়েল ৭০ থেকে ৯১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বলেন, করোনা সংকটে দেশের সাধারণ মানুষের আয় তীব্র গতিতে কমলেও জীবন-যাপনের ব্যয় বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার প্রধানত শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবীসহ নির্দিষ্ট আয়ের কর্মচারী। মেহনতি মানুষের মজুরি বাড়ে না কৃষক ফসলের যুক্তিসঙ্গত দাম পান না, কর্মচারীদের বেতন দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনেক ক্ষেত্রে বাড়ে না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগতই বাড়ছে। সবমিলিয়ে মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষ এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে জীবনযাত্রার মান কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি অনেকে বাড়তি খাবার কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিত্তবানদের জন্য দ্রব্যমূল্য প্রত্যক্ষভাবে কখনোই তেমন সমস্যা নয়। কারণ তাদের আয় প্রায় সীমাহীন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে আয় করে তা দিয়ে তাকে হিসাব করে চলতে হয়।
ভোক্তা অধিকার খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, সবজির বাজার সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম বাড়ে কমে। তবে কেউ সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।